বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হল দেশব্যাপী পরিচালিত একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা যা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কর), বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (পুলিশ) সহ ২৬ পদে কর্মী নিয়োগের জন্য পরিচালিত হয়।[1]
যা পূর্বে ২৭টি ছিল, ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে
একত্রিত করে। বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়-
প্রাথমিক পরীক্ষা (এমসিকিউ), লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা
(ইন্টারভিউ)। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ১.৫ থেকে ২ বছর সময় লাগে।[2]
প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকারের ইম্পেরিয়াল সিভিল সার্ভিসের
উপর ভিত্তি করে পরিচালিত। বিসিএস পরীক্ষাকে বাংলাদেশে চাকরি প্রার্থীদের
জন্য অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হিসাবে বিবেচনা করা
হয়। প্রতি বছর গড়ে ৩,৫০,০০০ থেকে ৪,২৫,০০০ হাজার প্রার্থী আবেদন করে, যা
বছরের চাকরি প্রার্থীদের প্রায় ৯০% শতাংশ। পরীক্ষায় সকল ক্যাডার মিলে গড়
সাফল্যের হার ০.০২% এবং সাধারণ ক্যাডারের ক্ষেত্রে যা ০.০০৫% শতাংশ, যদিও
প্রতি বছর এ হার পরিবর্তিত হয়।
প্রথম ধাপ:
প্রাথমিক পরীক্ষা - এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব।
প্রতি বছর সাধারণত মে/জুন মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার এক মাস
আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় এক থেকে দেড় মাস পরে
ফলাফল প্রকাশিত হয়।
দ্বিতীয় ধাপ:
লিখিত পরীক্ষা - এটি বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা, সাধারণত প্রতি বছরের
অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক মাস আগে
পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর
সাধারণত ফলাফল প্রকাশিত হয়।
তৃতীয় ধাপ:
মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) - লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর
মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষার ১.৫ থেকে ২ মাস পর বিসিএস
পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়।
যোগ্যতা
উচ্চ
মাধ্যমিক পাসের পর চার বছরের অনার্স পাস হলেও বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা
যায়। কেউ যদি তিন বছরের অনার্স বা পাস কোর্সে পড়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই
মাস্টার্স পাস হতে হবে। শিক্ষা জীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণি থাকলে
বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের অযোগ্য।
প্রাথমিক পরীক্ষা
প্রাথমিক পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়। ১০ টি বিষয়ের উপর নৈর্বক্তিক প্রশ্ন থাকে। সময় ৪ ঘণ্টা।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) = ২০০ নম্বর
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা = ১০০ নম্বর
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি = ১০০ নম্বর
প্রফেশনাল ক্যাডার
সাধারণ বাংলা = ১০০ নম্বর
General English (Part I & II) = ২০০ নম্বর
বাংলাদেশ বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) = ২০০ নম্বর
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা = ১০০ নম্বর
দুটি কাগজপত্র জন্য পোস্ট সম্পর্কিত বিষয় = ২০০ নম্বর
উভয় ক্যাডার
এক জন আবেদনকারী উভয় ক্যাডারে আবেদন করলে নয়টি আবশ্যক বিষয় এবং দুইটি পদ সম্পর্কিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।[1]
মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)
যেসকল
প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে শুধু তারাই মৌখিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য
বলে নির্বাচিত হন, যা সাধারণত ইন্টারভিউ নামে বেশি প্রচলিত। অন্য দুই ধাপের
চেয়ে এ ধাপে সাফল্যের হার খুবই নগণ্য। বর্তমানে মৌখিক পরীক্ষার জন্য
বরাদ্দ নম্বর হল ২০০।
চূড়ান্ত নির্বাচন
পিএসসি
প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার সংগৃহীত নম্বর (লিখিত ৯০০ নম্বরের মধ্যে) এবং
মৌখিক পরীক্ষার সংগৃহীত নম্বরের (২০০ নম্বরের মধ্যে) উপর ভিত্তি করে
চূড়ান্ত যোগ্যতা নির্ধারণ করে। পূর্বে ৫৫% শতাংশ প্রার্থী প্রচলিত কোটা
পদ্ধতি অনুসারে এবং ৪৫% শতাংশ প্রার্থী মেধা অনুসারে বাছাই করা হত।
বর্তমানে শতভাগ প্রার্থী মেধা অনুসারে বাছাই করা হচ্ছে। পিএসসি যোগ্যতা
সম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সুপারিশ
করে। এরপর মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্বাস্থ্য
পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এনএসআই ভেরিফিকেশন শেষে তাদের নাম গেজেট
আকারে প্রকাশ করে। সাধারণত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত এক থেকে দেড় বছর সময়
লাগে।
ক্যাডার
১৪ টি সাধারণ ও ১২ টি পেশাগত/কারিগরি, সর্বমোট ২৬ টি ক্যাডার রয়েছে।[২]
সাধারণ ক্যাডার
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিরীক্ষা ও হিসাব)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (খাদ্য)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (তথ্য)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ডাক)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বাণিজ্য)
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকোনমিক) (বর্তমানে বিলুপ্ত)